মাইক্রোসফট অফিসের কিছু বিকল্প অফিস সুইট


অফিস সুইট বলতে আমরা শুধু মাইক্রোসফট অফিসকেই বুঝি। তবে এটি ছাড়াও বেশ কিছু অফিস সুইট আছে, যা অনেকেই জানেন না। সেগুলো মাইক্রোসফট অফিসের মত অত ফিচারবহূল না হলেও বেশীরভাগই বিনামূল্যে পাওয়া যায় আর অপেক্ষাকৃত স্লো কম্পিউটারেও চালানো সম্ভব।


১। গুগল ড্রাইভ:

এই সুইটটির মাধ্যমে অফিসের প্রায় সকল সাধারণ কাজ করা সম্ভব। ওয়ার্ড ফাইল, বা এক্সেল স্প্রেডশীট, বা পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড - এই তিনটই তৈরি সম্ভব এর মাধ্যমে। আর বোনাস হিসেবে থাকছে পিডিএফ পড়া বা তৈরির সুবিধা। শুধু তাই নয়, আপনার সকল কাজ প্রতি মুহূর্তে অটোম্যাটিক সেভ হয়ে যাবে আপনি সেভ করা ছাড়াই, তাই কাজ হারানোর সম্ভাবনাও নেই। তবে এই সুইটটির সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে, ব্যবহার করার জন্য পিসিতে কিছুই ইন্সটল করতে হবেনা - লাগবে শুধু ২৫৬ কেবিপিএস বা তার চেয়ে অধিক গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট।

গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করতে হলে আপনার থাকতে হবে জিমেইল আইডি। না থাকলেও সমস্যা নেই, বিনামূল্যে জিমেইল আইডি খুলে নিতে পারবেন http://www.mail.google.com থেকে। এর পর আইডি একটিভ হবার পর চলে যান http://www.drive.google.com এ, তার পর ক্রিয়েট থেকে নির্বাচন করুন আপনার কাজের অংশটি। আপনার কাজ শেষ হয়ে গেলে ফাইল মেনু থেকে কাংখিত ফরম্যাটে ফাইলটি ডাউনলোড করে নিন। যদি ডাউনলোড নাও করতে চান তাহলেও সমস্যা নেই, আপনার ফাইলটি আপনার গুগল ড্রাইভে অনলাইনে সেভ হয়ে থাকবে। (ফাইলের নাম পরিবর্তন করতে হলে Untitled Document এ ক্লিক করুন)।

আপনার পিসিতে যদি মাইক্রোসফট অফিসে করা ডকুমেন্ট থাকে তাহলে সেগুলোও গুগল ড্রাইভে আপলোড করে এডিট করতে পারবেন ও সেভ করে রাখতে পারবেন। যারা বেশ অনেক গুলো অপারেটিং সিস্টেম বা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের জন্য সার্ভিসটি অনন্য।

২। ওপেন অফিস:

মাইক্রোসফট অফিসের সবচাইতে আদর্শ রিপ্লেসমেন্ট ধরা হয়ে থাকে ওপেন অফিস সুইটকে। অ্যাপাচির তৈরি এই অফিস সুইটটি মূলত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি করা হলেও এটির উইন্ডোজ ও ম্যাক সংস্করণ উভয়ই রয়েছে। এটির মাধ্যমে মাইক্রোসফট অফিসের সকল কাজ, যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং, ডাটাবেজ, ভেক্টর ড্রইং, স্প্রেডশীট, ও প্রেজেন্টেশন ও পিডিএফ তৈরি সবকিছুই করতে পারবেন। আর মজা ব্যাপার হচ্ছে এর সাইজ মাত্র ৪০০-৫০০ মেগাবাইট ও পাওয়া যাবে বিনামূল্যে, পাইরেসি ছাড়াই।

তবে এটি ব্যবহারের ২টি সমস্যা রয়েছে। এক হচ্ছে সেভ করার সময় ফাইল ফরম্যাট মাইক্রোসফট অফিস করে দিতে হবে, নাহলে মাইক্রোসফট অফিসে ওপেন করা যাবেনা। আরেকটি হচ্ছে এটির ইন্টারফেস অফিস ২০০৩ এর মত, অতএব পুরোনো ব্যবহারকারীদের কাছে ভালো লাগলেও নতুনদের কাছে পুরোনো মনে হতে পারে।

তবে অন্যান্য দিক থেকে সুইট টি বেশ কাজের। দরকার হলে এটিকে পোর্টেবল করে পেনড্রাইভে রেখে দেয়া সম্ভব, ইন্সটল ছাড়াই সেটি দিয়ে কাজ করা যাবে। এটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন এখান থেকে:http://www.openoffice.org/download/

৩। লিব্রে অফিস:

ওরাকল অ্যাপাচিকে কিনে নেয়ার পর অনেকেই ব্যাপারটিকে ভালো চোখে দেখেননি। যারা চেয়েছিলেন অ্যাপাচির হাতেই থাকুক ওপেন অফিস তাদের মধ্যে বেশ কিছু ডেভেলাপাররা সেটির সোর্স কোড ব্যবহার করে তৈরি করেছেন লিব্রে অফিস। ফিচারের দিক থেকে এটি ওপেন অফিসের সমকক্ষ হলেও স্লো পিসির জন্য তৈরি, তাই যায়গা ও র‌্যাম দুটোই কম ব্যবহার করে এটি।

তবে বাকি দিক থেকে ওপেন অফিসের সাথে কোনও পার্থক্য নেই এটির। এর মাধ্যমেও ওয়ার্ড প্রসেসিং, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, ভেক্টর ড্রইং ও স্প্রেডশীট তৈরি সম্ভব। তবে এটির ও ইন্টারফেস একটু পুরাতন তাই নতুনদের কাছে একটু খারাপ মনে হতে পারে।

লিনাক্স ডিস্ট্রোর সাথে প্রায়ই বিল্ট-ইন দেয়া হয় এই সুইটটি। তবে এর ম্যাক ও উইন্ডোজ সংস্করণ ও রয়েছে। সাথে থাকছে পোর্টেবল করে পেন-ড্রাইভ থেকে চালানোর সুবিধা।

এটি পাওয়া যাবে এখান থেকে: http://www.libreoffice.org/download/libreoffice-fresh/

এছাড়াও আরও কিছু অফিস সুইট রয়েছে, তবে সেগুলোর ফিচার এর পরিমাণ বেশ কম। অ্যাপল এর আই-ওয়ার্ক সুইটটিও বেশ কাজের, তবে শুধু ম্যাক ছাড়া এটি ব্যবহারের আর কোনও সুযোগ নেই। এ ছাড়াও ক্যালিব্রি সুইট রয়েছে, তবে তা শুধু মাত্র লিনাক্সের জন্যেই। তবে মাইক্রোসফট অফিসের সকল ফিচার দিতে পারে এমন সুইট এখনো তেমন নেই, তবুও সেটি কোনও কারণে ব্যবহার করা সম্ভব না হলে এই সুইটগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন