বাংলাদেশে আহরণযোগ্য ইউরেনিয়াম এর সন্ধান



গত দুই দশক ধরেই জোর গুঞ্জন ছিল, বাংলাদেশের মাটিতে উত্তোলনযোগ্য ইউরেনিয়াম পাওয়া সম্ভব। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনটি সত্যি হয়ে ধরা দিল বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) এর রিপোর্টে। দেশের বৃহত্তর তিন নদী পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনায় এবং সিলেট বিভাগ ও ময়মনসিংহে নদীবাহিত বালুতে বাণিজ্যিক
ভিত্তিতে আহরণযোগ্য ইউরেনিয়াম রয়েছে বলে জানিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম
বলেন, “বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। সেখানে সবচেয়ে দামি খনিজ প্লাটিনাম রয়েছে বলেও শোনা গেছে। তবে সরাসরি নয়, এই ইউরেনিয়াম বাণিজ্যিকভাবে আহরণের পর বিশ্ববাজারে বিক্রি করা যাবে।”
যেভাবে শুরুঃ জিএসবি পূর্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়ের আশেপাশের এলাকায় ইউরেনিয়ামের সন্ধান পেয়েছিল, যদিও তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আহরণযোগ্য ছিল না। ১৯৮৯ সালে উল্লিখিত নদীগুলোয় উজান থেকে বয়ে আনা বালুতে গুরুত্বপূর্ণ ভারী খনিজ ও রাসায়নিকের সন্ধান পাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে সরকার কার্বন মাইনিং বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্রহ্মপুত্র, যমুনার প্রায় চার হাজার হেক্টর চরাঞ্চল অনুসন্ধান জরিপের জন্য নির্দেশ দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, কুড়িগ্রাম জেলার যমুনার বালুতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইউরেনিয়ামসহ কয়েক প্রকার ভারী খনিজের নিশ্চিত উপস্থিতি রয়েছে।



প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যকে সুত্র ধরে জিএসবি পদ্মা, যমুনার বালুর রাসায়নিক ও খনিজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। এর অধীনে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার অন্তত ১০টি স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ২০ মিটার গভীরতা থেকে বালুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যা দেশে ও বিদেশের গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, ওই নদীগুলোর বালুতে আহরণযোগ্য ভারী খনিজ ও রাসায়নিকের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। বানিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের জন্য যেখানে ৭ শতাংশই যথেষ্ট। প্রতি ১ টন বালুতে যদি ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম পাওয়া গেলেই বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ” বিষয়টি সম্পর্কে নিবিড় জরিপ ও অনুসন্ধানের জন্য জিএসবিকে একটি প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে। এটি তৈরির প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে।”

জিএসবির মহাপরিচালক সিরাজুর রহমান খান বলেন, “কার্বন মাইনিং অনুসন্ধান এবং জিএসবির বিশেষ কার্যক্রমের ফলাফল প্রায় একই রকম ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক। অতি শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন